মানুষ স্বভাবতই দুই হাত ও দুটি পা নিয়ে জন্মায়। তবে শারীরিক ত্রুটির কারণে অনেকেই অস্বাভাবিকভাবে জন্মায়। তেমনি এক মেয়ে জন্মেছিলো চারটি পা নিয়ে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই! এমন অদ্ভুত শরীরের মানুষদের কথা মাঝেমাঝে জানা গেলেও তারা ইচ্ছে করলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। তবে মার্টল করবিন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
আমেরিকার টেনেসি অঞ্চলের লিঙ্কন কাউন্টিতে ১৮৬৮ সালে জন্ম নেন মার্টল করবিন নামের এক কন্যা। তার স্বাভাবিক দুইটি পায়ের ভেতরের দিকে উপস্থিত ছিলো আরো একজোড়া পা। চিকিৎসাবিদের ধারনা ছিলো, তার যমজ বোনের শরীরের কিছু অংশ তার সঙ্গে জোড়া লাগানো ছিলো। যমজ সেই বোনের শরীরের শুধুমাত্র কোমর থেকে নিচের অংশটুকু উপস্থিত ছিলো মার্টল এর শরীরে।
এই দুইটি পায়েরও ছিলো মাত্র তিনটি করে আঙ্গুল। মার্টল এই দুই পা নাড়াতে পারতেন কিন্তু এই দুই পা হাঁটার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো না। এছাড়াও তার নিজের পা দুটির মাঝে একটি ছিলো একটু অস্বাভাবিক। ফলে এই চার পা ওয়ালা মেয়েটির শরীরে মাত্র একটি পা ছিলো সুস্থ-সবল। পা ছাড়াও একটি অতিরিক্ত পেলভিস এবং যৌনাঙ্গ ছিলো মার্টলের শরীরে।
ছোটবেলা থেকেই সার্কাসের দলে যোগ দেন তিনি। টেক্সাসের চার পা ওয়ালা মেয়ে হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি নিজের কর্মক্ষম দুই পায়ের সঙ্গে মিলিয়ে ছোট দুইটি পায়েও জুতা-মোজা পরতেন যাতে দর্শকেরা হতভম্ব হয়ে যায়। খ্যাতির কারণে প্রতি সপ্তাহে ৪৫০ ডলার করে আয় হতো তার, সে সময়ে এমন আয় করাটাও ছিলো দুর্লভ। ১৮ বছর বয়স হতেই তিনি প্রচুর অর্থ জমিয়ে ফেলেন এবং সার্কাস থেকে অবসর নেন। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন ক্লিন্টন বিকনেল নামের এক চিকিৎসককে।বিয়ের পর তার এই অন্যরকম শরীরের বৈশিষ্ট্য আরো ভালোভাবে ফুটে ওঠে। তার দুইটি যৌনাঙ্গের আলাদা আলাদাভাবে সন্তান ধারণের ক্ষমতা ছিলো। তার দুই জরায়ু থেকেই ঋতুস্রাব পরিলক্ষিত হয় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় দুইটিই কর্মক্ষম ছিলো। বিয়ের এক বছরের মাথায় তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে অ্যালাবামার ডাক্তার লিউইস হোয়েলিকে ডাকা হয়। তার শরীরের বাম দিকের জরায়ুতে গর্ভসঞ্চার হয়েছে এ কথা জানতে পেরে অবাক হন মার্টল।
কারণ তিনি আশা করতেন ডান দিকের জরায়ুতে সন্তান ধারণ করবেন তিনি। প্রথমবার গর্ভধারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আট সপ্তাহের মাথায় গর্ভপাত ঘটাতে হয়। তবে এর পরেও তিনি পরবর্তীতে চার কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। বলা হয়ে থাকে, তার তিন জন সন্তান এক জরায়ু থেকে এবং বাকি দুই জন ওপর জরায়ু থেকে জন্ম নেয়।
শারীরিকভাবে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও মার্টল করবিনের ব্যাপারে বলা হয়, তিনি ছিলেন ভদ্র এবং মিষ্টি স্বভাবের মানুষ। তিনি ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে তার কোনো সমস্যা হতো না। তার ব্যাপারে আরো বলা হয়, তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতি এবং সুরুচিপূর্ণ। ১৯২৮ সালে পরিবার ও পরিজনদের মাঝে মারা যান মার্টল। তখন তার বয়স ছিলো ৬০ বছর।
পাঠকের মতামত